০৫। হজের কিছু পরিভাষা যা হাজীদের জানা থাকা জরুরীঃ-

০৫। হজের কিছু পরিভাষা যা হাজীদের জানা থাকা জরুরীঃ- যেমনঃ- ০১। ইহরাম ০২। তাওয়াফ ০৩। রমল ০৪। ইদত্বিবা ০৫। সায়ী ০৬। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ০৭। মাকামে ইব্রাহিম ০৮। ইসতেলাম ০৯। মিযাবে রহমত ১০। মুলতাযাম ১১। হাতীমে কা’বা ১২। যমযম ১৩। মিনার ময়দান/ তাবু ১৪। আরাফাতের ময়দান ১৫। মাসজিদে নামিরা ১৫। মুজদালিফা ও ১৬। জামারাত ১৭ । দম ০১। ইহরাম আরবি শব্দ যার অর্থ-হারাম করে দেয়া, নিষেধ করা ও বাধা প্রদান করে ইত্যাদি। পরিভাষায়- হজ ও উমরার কার্যক্রমে প্রবেশ করার নিয়্যতে সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় পরিধান করাকে ইহরাম বলে। অর্থাৎ হজ ও উমরার কার্যাবলীতে প্রবেশ করার নামই ইহরাম। ইহরাম হজ ও উমরার রোকন। ০২। তাওয়াফ আরবি শব্দ যার অর্থ- প্রদক্ষিণ করা বা চক্কর দেয়া মহান প্রভুর সন্তুষ্টির আশায় কাবা ঘরকে সাত চক্কর দেয়ার নাম হলো তাওয়াফ। তাওয়াফ নামাজের মতো ইবাদত। অজু ছাড়া তাওয়াফ করা জায়েজ নাই। ০৩। রমল আরবি শব্দ যার অর্থ-ঘন ঘন কদম ফেলে দুলকী চালে দ্রæতচলা এটা পুরুষের জন্য তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্ররে প্রযোজ্য। ০৪। ইদত্বিবা আরবি শব্দ। ইদত্বিবা মানে পুরুষ মুহরিমের ডান কাধ খোলা রেখে অর্থাৎ ডান কাদের নিচ দিয়ে ইহরামের ওপরের চাঁদরটির উভয় মাথা বাম কাঁধের ওপরে স্থাপন করে বিশেষভাবে পরিধান করা। এটা কেবল তাওয়াফে কুদুমের বেলায় প্রযোজ্য। ০৪। সায়ী আরবি শব্দ। যার অর্থ- দ্রæত চলা, হাটা বা চেষ্টা করা ইত্যাদি মহান রব আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতটি চক্কর দেয়াকে সায়ী বলে। সাফা থেকে মারওয়াতে গেলে এক চক্কর, মারওয়া থেকে সাফা আসলে এক চক্কর এভাবে সাতটি চক্করকে সায়ী বলে। মারওয়াতে গিয়ে সায়ী শেষ হবে। ০৫। সাফা ও মারওয়া পাহাড় Ñকাবা শরীফের খুব কাছের ফজিলত পূর্ণ দুটি পাহাড়ের নাম সাফা ও মারওয়া। বলা হয়ে থাকে বাবা আদম(আ.) সাফা পাহাড়ে ও মা হাওয়া(আ.) মারওয়া পাহাড়ে আরোহন করেছিলেন। ইব্রাহিম (আ.) ও এই পাহাড়ে আরোহন করেছেন। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ যে কথা তাহলো মা হাজেরা শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.) কে পিপাসা নিবারনের পানির জন্য দিক-বিদিক ছুটাছুটির এক পর্যায়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে ছুটাছুটি করছিলেন। মা হাজেরার শিশুপুত্র ইসমাইল(আ.) প্রতি নিধারুন অকৃত্রিম ভালবাসার নিদর্শন স্বরন স্বরুপ আল্লাহ পাক এই পাহাড়দ্বয়ে সায়ী করাকে উমরা ও হজের বিধানের মধ্যে শামিল করেছেন। এই পাহাড়দ্বয় জাহেলী যুগ থেকেই সম্মানিত ছিল, ইসলাম আসার পরও আল্লাহ একে সম্মানিত করেছেন। ০৬। মাকামে ইব্রাহিম - আরবি শব্দ। অর্থ- ইব্রাহিম (আ.) দাড়ানোর স্থান। বস্তুত একটি জান্নাতি পাথর যা মহান প্রভু ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা নির্মাণের সময় তাকে সহযোগিতার পাঠিয়েছেন, যা জীবন্ত লিফটের মতো কাজ করেছে। উপরে উঠার প্রয়োজন উপরে উঠেছে, নিচে নামার প্রয়োজন নিচে নেমেছে। ০৭। ইসতেলাম-আরবি শব্দ। অর্থ-স্পর্শ করা, ছোয়া, টাচ করা, প্রাপ্তি বা হাত দিয়ে ধরা। যেমন-রোকনে ইয়ামানি হাত দিয়ে ইসতেলাম বা স্পর্শ করা সুন্নাত, হাজরে আসওয়াদ ইসতেলাম বা স্পর্শ করা সুন্নাত(সম্ভব হলে এই দুটি ইসতেলাম করতে পারেন কেননা আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ(সা.) তা করেছেন) ০৮। মিযাবে রহমত- আরবি শব্দ। কা’বা (ঘরের)শরীফের ছাদের উপরে বৃষ্টির পানি পরার পর এই ছাদের পানি একটি নালা বা পাইপের মতো যন্ত্রটি দিয়ে কা’বার উত্তর পাশে হাতীমে কা’বায় গড়িয়ে পরে ঐ যন্ত্রটির নাম মিযাবে রহমত। কারো কারো মতে এর নীচে দু’আ কবুল হয়। ০৯। মুলতাযাম- আরবি শব্দ। কা’বা শরীফের পবিত্র দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানটিকে মুলতাযাম বলা হয়। এইটি দুআ কবুলের জায়গা। সম্ভব হলে এই স্থানে বুক, গাল ও দুই হাত প্রসারিত করে আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। ১০। হাতীমে কা’বা-আরবি শব্দ। কা’বা শরীফের উত্তর দিকে কা’বা ঘর সংলগ্ন ৪ ফুট উচু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত স্থানকে হাতেমে কাবা বলা হয়। হাতীমের আশে-পাশে মা হাজেরা ও ইসমাইল (আ.) এর বসবাস ছিল। ১১। যমযম-আরবি শব্দ। কারো মতে যমযম ইবরানী শব্দ। অর্থ-অনেক পানি, জমা হও। যমযমের পানি হলো যা লবণ ও মিষ্টি মিশ্রিত। আল্লাহর রহমতের জান্নাতী পানি, যার অনেক গুণাগুণ হাদিছে পাকে ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক টেস্টে পাওয়া গেছে। কা’বা শরীফের পাশে মাকামে ইব্রাহিম এর থেকে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ ফুটের মধ্যে যমযম কুপ। মা হাজেরা(আ.) ও ইসমাইল (আ.) স্মৃতি বিজড়িত এই যমযম। ২১/১০/২০২২ ১২। মিনার ময়দান/ তাবু ঃ পৃথিবীর সকল হাজী আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার আগের দিন মিনার তাবুতে অবস্থান নেয়, এখানে হাজী সাহেবরা তাদের জন্য নির্ধারিত তাবু কার্ড দিয়ে তিন দিন তিন রাত অবস্থান করেন। মিনার তাবু বড় বরকতময় ময়দান। ১৩। আরাফাতের ময়দান ঃ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হজ। এই তারিখে হজের জন্য হাজী সাহেবগণ যে ময়দানে অবস্থান করেন সেই বরকতময় স্থানকেই আরাফাতের ময়দান বলা হয়। আরাফাতের ময়দান বাবা আদম (আঃ) মা হাওয়া (আঃ) দুনিয়াতে মিলনস্থল, অসংখ্য নবী রাসুলসহ শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) জাবালে রহমতের পাদদেশে দাড়িয়ে সোয়া লক্ষ সাহাবির সামনে বিদায় হজের ভাষন প্রদান করেছেন এই বরকতপূর্ণ ময়দানে। ১৪। মাসজিদে নামিরা ঃ বর্তমানে হজের ইমাম যে মাসজিদ থেকে হাজীদের উদ্দেশ্যে হজের ভাষন বা খুৎবা প্রদান করেন, এই মসজিদের নাম হলো মাসজিদে নামিরা। এক আযান দুই ইকামতের মাধ্যমে যোহর ও আছর জমা করে কছর করে আদায় করা হয়। ১৫। মুজদালিফা ঃ হজের দিনের কাজ শেষে মুজদালিফায় রাত্রি যাপন হজের ওয়াজিব। এই মাঠে সমস্ত নারী-পুরুষ খোলা আকাশের নীচে মাগরিব ও এশার সালাত এক সাথে জমা করে কছর করে আদায় শেষে ঘুমানো হলে সুন্নাত। সম্ভব হলে সারা রাত অবস্থান করবেন। ফজরের পর দুআ কবুলের সময়। ১৬। জামারাত ঃ জামারাত - আরবি শব্দ, অর্থ- ছোট পাথর। বাবা আদম (আঃ) ও জাতীর পিতা ইব্রাহিম (আঃ) অনুসরনে শয়তানকে বিতাড়িত করার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপের স্থান। খাটি বাংলায় আমরা বলি বড় শয়তান, মধ্যম শয়তান ও ছোট শয়তান। হজের ওয়াজিব। ১৭। দম-আরবি শব্দ। অর্থ- রক্ত, প্রতিশোধ, জরিমানা ইত্যাদি। অর্থাৎ নামাজে ওয়াজিব ছুটে গেলে যেমন সহু সিজদা প্রয়োজন হয়, তেমনি হজে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে বা ভুল করলে একটি দম দিতে হয়। আর তাহলো ছাগল-দুম্বা ইত্যাদি জাতীয় পশু আল্লাহর নামে কুরবানি করে হারাম এলাকাতে কাউকে দিয়ে দিতে হবে। দম প্রদান কারী দমের গোস্ত খেতে পারবে না। হজ আদায় কারীর কুরবানির পশুকে হাদি বলে।